শরীয়তপুর প্রতিনিধি :
শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতুর কাছে যাত্রাবিরতি করা শত শত বাল্কহেড থেকে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় একটি চক্র ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন এই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
বাল্কহেডের কর্মচারী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যমুনা নদী থেকে বালু বোঝাই করে প্রতিদিন শত শত বাল্কহেড পদ্মাসেতুর নিচ দিয়ে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চাঁদপুর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। যাত্রাপথে বালুবাহী বাল্কহেডগুলো পদ্মাসেতু থেকে দুই কিলোমিটার ভাটিতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্টে যাত্রাবিরতি করে। সারারাত সেখানে থাকার পর ভোরে বাল্কহেড গুলো যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এই বালুবাহী বাল্কহেড গুলো রাতের বেলা পদ্মার পাড়ে ভিড়িয়ে রাখতে সহায়তার নামে স্থানীয় সুরুজ মাদবর, জসিম মাদবর, শাজাহান চৌকিদার, রাজ্জাজ চৌকিদার সহ একটি চক্র প্রতিটি বাল্কহেড থেকে দুইশ থেকে পাঁচশ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে। এই চাঁদাবাজির সাথে পুলিশ প্রশাসনের লোকজনও জড়িত বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
গতকাল শক্রবার সন্ধ্যায় মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট গিয়ে দেখা যায়, শত শত বালুবোঝাই বাল্কহেড পদ্মার পাড়ে এসে একের পর এক ভিড়ছে।
এসময় স্থানীয় বাচ্চু ফরাজি বলেন, প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শত শত বালুবোঝাই বাল্কহেড এসে এখানে ভেড়ে। সকাল হলে তারা আবার চলে যায়। সুরুজ মাদবর, জসিম মাদবর, শাজাহান চৌকিদার, রাজ্জাজ চৌকিদার সহ স্থানীয় একটি চক্র প্রতিটি বাল্কহেড থেকে দুইশ থেকে পাঁচশ টাকা চাঁদা নিয়ে বাল্কহেডগুলো এখানে ভিড়তে সুযোগ করে দেয়। এই চাঁদাবাজির সাথে মাঝিরঘাট নৌ-ফাঁড়ির নৌপুলিশ ও পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানা পুলিশ জড়িত। তারা প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে এসে এখান থেকে চাঁদা নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকা পদ্মার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। প্রতিদিন বিশাল আকারের শত শত বাল্কহেড এখানে ভিড়ার পর আবার ছেড়ে গেলে এই এলাকা ভাঙ্গনের মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের পদ্মাপাড়ের মানুষের দাবি, এখানে যেন বালুবাহী বাল্কহেড ভিড়তে না দেওয়া হয়।
হাজী কাশেম মাদবর বলেন, প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পদ্মার পাড়ে বালু বোঝাই বাল্কহেডগুলো ভিড়তে থাকে এবং ভোর হলে আবার ছেলে চলে যায়। এতে পদ্মার পাড় কেঁপে ওঠে। আমরা আতংকে থাকি কখন জানি আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে নিয়ে যায়। কিছু দুষ্কৃত লোক বাল্কহেড থেকে টাকা থেকে এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমরা চাই এখানে যেন কোন বাল্কহেড ভিড়তে না পারে।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মঙ্গল মাদবর বলেন, একটি চক্র প্রতিটি বাল্কহেড থেকে দুইশ থেকে পাঁচশ টাকা চাঁদা নিয়ে শত শত বাল্কহেড আমাদের এই পদ্মার পাড়ে ভেড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা পাঁচশ পরিবার এই পদ্মার পাড়ে বসবাস করছি। এই বাল্কহেড ভেড়ার করানে আমরা সবসময় আতংকে থাকি কখন জানি আমাদের বাড়িঘর পদ্মার ভাঙ্গনে চলে যায়। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের সকলের দাবি, এখানে যেন আর কোন বাল্কহেড ভিড়তে না দেওয়া হয়।
মহিউদ্দিন নামে বাল্কহেডের এক কর্মচারী বলেন, আমরা যমুনা থেকে বালু নিয়ে এসেছি, ঢাকায় যাবো। রাতে আমারা এখানে যাত্রাবিরতি করবো। এখানকার কিছু লোক আমাদের কাছ থেকে দুইশ টাকা করে নিচ্ছে।
সন্ধ্যার পরে বাল্কহেডের কাছে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা পুলিশের দুইজন সদস্যকে দেখা যায়। এখানে কেন আসছেন জানতে চাইলে ফুয়াদ নামে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার এসআই বলেন, কেউ কোন জামেলা করছে কিনা তা দেখার জন্য এখানে এসেছি। চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। কারা চাঁদাবাজি করছে তাও আমরা জানিনা।
অভিযুক্তদের মধ্যে সুরুজ মাদবর বলেন, স্থানীয় কিছু লোকজন বাল্কহেডগুলো খুঁটি দিয়ে বেঁধে রাখতে সহায়তা করে এবং পাহারা দিয়ে রাখে। তাই বাল্কহেডের লোকজন খুশি হয়ে কিছু টাকা দেয়। এখানে কেউ চাঁদাবাজি করেনা।
মাঝিরঘাট নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোশারফ হোসেন বলেন, আমার নৌ ফাঁড়ির কেউ চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নয়। যদি কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পাই তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আকরাম হোসেন বলেন, পদ্মাসেতু ও তার আশপাশে ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় কোন বাল্কহেড যাতে ভিড়তে না পারে এবং সেগুলো সরিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের ডিউটি থাকে। নিয়মিত ডিউটির অংশ হিসেবে পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। আমাদের পুলিশের কেউ বাল্কহেড থেকে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নয়। এছাড়া অন্য কেউ চাঁদাবাজি করছে কি-না তা আমার জানা নেই।