শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে রোগী হয়রানি ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য রোধে যৌথ অভিযান চালিয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও পালং মডেল থানা পুলিশ।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন এবং জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ আবু বক্করের নেতৃত্বে মঙ্গলবার (১৩ মে) বেলা ১১টার দিকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে হাসপাতালের চত্বর, বহির্বিভাগ ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাফেরা করা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিচালিত এ অভিযানে দালালচক্রের তৎপরতা ঠেকাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। একই সঙ্গে রোগী ও স্বজনদের নির্ভয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে উৎসাহিত করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি দালাল চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় হাসপাতালে আসা রোগীদের হয়রানি করে থাকে। তারা প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। এতে সাধারণ রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে। দালালের বিরুদ্ধে আজ আমরা অভিযান চালিয়েছি। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। তারা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সহজ-সরল রোগীদের ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে সর্বস্বান্ত করে ছেড়ে দেন। তাদের পিছনে রয়েছে সদর হাসপাতালকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক ডজনেরও বেশি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের চিকিৎসকদের সহকারীরাও দালাল সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।
"সহকারীরাই রোগী ভাগান ক্লিনিকে" শিরোনামে গত ৮ মে সমকাল পত্রিকায় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে দালালির চিত্র তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর হাসপাতালের সামনে নারী দালালদের দ্বারা হামলার শিকার হন সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসক ও তাদের সহকারীরা দালাল সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। পছন্দের ক্লিনিকে পরিক্ষা না করালে ডাক্তাররা হাসপাতালে চিকিৎসা দেননা। এই এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা।
জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলামের নির্দেশে দালালদের বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে অভিযান চালায় পুলিশ।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো: নজরুল ইসলাম বলেন, সদর হাসপাতালে দালালদের লিস্ট পেয়েছি। দলালরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের হয়রানি করেন। অনেক সময় দালালরা রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। এখন থেকে দালালদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সদর হাসপাতালের আশপাশের প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কিছু চিহ্নিত লোকজনকে প্রতিনিয়ত সদর হাসপাতালে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এদের কারণে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। আমরা চেষ্টা করেও দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পারতেছি না। তাই আমরা চিহ্নিত দালালের লিস্ট থানায় জমা দিয়েছি। পুলিশ আজকে হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে। পুলিশ এবং প্রশাসন সহযোগিতা করলে আমরা দালাল নির্মূল করতে পারবো।