নিজস্ব প্রতিবেদক :
শরীয়তপুরের জাজিরায় এক প্রবাসীর দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী প্রবাসী আব্বাস মাল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন।
তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শহিদুল শিকদারের স্ত্রী রুনা বেগম।
জানা গেছে, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানাধীন নাওডোবা ইউনিয়নের মজিদ ঢালী চরকান্দি গ্রামের কাদের মালের ছেলে আব্বাস মাল (৩৫) ও একই এলাকার লাল মিয়া শিকদারের ছেলে শহিদুল শিকদার (৪২) দীর্ঘদিন যাবৎ সৌদি আরব প্রবাসী।
তারা দু’জন একই গ্রামের ছেলে হওয়ায় এবং একই সাথে সৌদি আরব প্রবাসে থাকায় দু’জন মিলে দীর্ঘদিন যাবৎ সৌদি আরবে ব্যবসা করতেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সৌদী আরবের প্রাইম গেট কোম্পানীর কাজ শেষে চুক্তিকৃত ৪ লাখ, ৬৭ হাজার ৪৪৫ টাকা শহিদুল শিকদার উঠিয়ে নেয়। যার মধ্যে আব্বাস মালের পাওয়ানা ২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এছাড়া উক্ত কোম্পানীতে শহিদুল শিকদারের অধিনে আব্বাস মালের বিনিয়োগ ছিল ৫ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা।
কন্সট্রাকশনের কাজের জন্য আব্বাস মাল ও শহিদুল শিকদার মিলে ১ কোটি ২৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করে। পরবর্তীতে শহিদুল শিকদার আব্বাস মালকে না জানিয়ে ওই যন্ত্রপাতির কিছু অংশ বিক্রি করে এবং কিছু তার দখলে নিয়া নেয়।
আল বাবতেইন কোম্পানী এলএলসি’র জোন-৫ সাব কন্ট্রাক্ট এর কাজের ৩ লাখ ৬০ হাজার সৌদি রিয়াল শহিদুল শিকদার উত্তোলন করলেও আব্বাস মালের পাওনা বাংলাদেশী ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৭২০ টাকা পরিশোধ করে নাই।
আল বাবতেইন কোম্পানী এলএলসি’র জোন-৩ সাব কন্ট্রাক্ট এর কাজ শেষে কাজের চুক্তিকৃত অর্থ ৭ লাখ ৫৫ হাজার রিয়েল শহিদুল শিকদার উত্তোলন করে। যার মধ্যে আব্বাস মালের পাওনা ৫৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা রয়েছে।
এছাড়া শহিদুল শিকদারের অধিনে আল বাবতেন কোম্পানীতে আব্বাস মাল বেতন বাবদ ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।
এ নিয়ে আব্বাস মাল সর্বমোট ১ কোটি ৫১ হাজার টাকা শহিদুল শিকদারের কাছে পাওনা আছে।
আব্বাস মালকে এসব টাকা পরিশোধ না করে শহিদুল শিকদার সমস্ত টাকা পয়সা ও মালামাল নিয়া বাংলাদেশে চলে আসে এবং আব্বাস মালের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
আব্বাস মাল দেশে এসে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে দরবার সালিশ করেও তার পাওনা টাকা ফেরত পাননি। শহিদুল শিকদার টাকা পরিশোধ না করে উল্টো আব্বাস মালকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়।
এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী প্রবাসী আব্বাস মাল। উপায় না দেখে অবশেষে তিনি জেলা পুলিশ সুপার, র্যাব ও পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার ওসির বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী প্রবাসী আব্বাস মাল বলেন, শহিদুল শিকদার ও আমি সৌদি আরবে পার্টনারে ব্যবসা করতাম। আমরা কন্ট্রাকে বিভিন্ন কোম্পানির কাজ করতাম। কাজ শেষে শহিদুল শিকদার আমাকে না জানিয়ে কোম্পানি থেকে টাকা তুলে তার শ্যালকের মাধ্যমে দেশে পাঠিয়ে দেন। আমি জানতে চাইলে শহিদুল বলে কোম্পানি টাকা দেয়নি। পড়ে আমি জানতে পারি কোম্পানি তাকে টাকা দিয়েছে এবং সেই টাকা দিয়ে শহিদুল দেশে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করছে। পরে আমি আমার পাওয়ানা টাকা ফেরত চাইলে শহিদুল দেই দিচ্ছি বলে টালবাহানা করে। পরে এ নিয়ে চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে অনেক দরবার সালিশ হয়েছে। কিন্তু শহিদুল শিকদার আমার পাওয়ানা টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। উপায় না পেয়ে আমি পুলিশ সুপার, র্যাব ও পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার ওসির বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই, আমি আমার কষ্টে অর্জিত পাওয়ানা টাকা ফেরত চাই।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য শহিদুল শিকদারের বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী রুনা বেগম বলেন, আব্বাস মাল আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সে থানায় অভিযোগ করেছেন, এখন সে যদি কোন প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে আমরা তাকে টাকা দিয়ে দেব।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন বলেন, আব্বাস মাল নামে এক সৌদি প্রবাসী তার ব্যবসায়িক পার্টনার শহিদুল শিকদারের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply