নিজস্ব প্রতিবেদক :
শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে পালং মডেল থানা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ চার বছর যাবৎ শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের কমিটি ছিলনা। ২০২২ সালে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
আজ মঙ্গলবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট শরীয়তপুর জেলা আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়। এতে এইচ.এম জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও সোহেল তালুকদারকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কমিটির বাকি সদস্যদের মধ্যে ১৬ জনকে যুগ্ম আহবায়ক ও ১৭ জনকে সদস্য করা হয়।
আগামী ১ মাসের মধ্যে আহবায়ক কমিটি পূর্নাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই আহবায়ক কমিটিকে প্রত্যাখান করে দুপুরে ঝাড়ু মিছিল করে জেলা ছাত্রদলের একটি পক্ষ। যাদের মধ্যে আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আফজাল খান, বাবু মাদবর, আতিকুর রহমান, পান্থ তালুকদার, ইসাহাক সরদার এবং সদস্য রিয়াদ হোসেন ও তাজমুল মাঝি রয়েছে।
এদিকে বিকেলে আহবায়ক কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে শহরে আনন্দ মিছিল বের করে এইচ.এম জাকির হোসেন ও সোহেল তালুকদারের অনুসারীরা।
তাদের প্রতিহত করতে কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আফজাল খান, বাবু মাদবর, আতিকুর রহমান, পান্থ তালুকদার ও ইসাহাক সরদারের নেতৃত্বে লাঠিসোঁটা নিয়ে শহরে মিছিল বের করা হয়। তারা পালং মডেল থানা এলাকায় আনন্দ মিছিলে হামলা করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রদলের পাঁচ কর্মী আহত হন। তাদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আফজাল খান বলেন, জাকির হাওলাদার (এসএসসি-২০০০), তিনি পেশায় একজন আইনজীবী এবং ২০১৭ সালে শরীয়তপুর জেলা বাস মালিক সমিতির যুগা আহবায়ক নির্বাচিত হন। তার পরিবারের সবাই আওয়ামীলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত। তার বড় ভাই আলমগীর হাওলাদার শ্রমিক লীগের জেলা সভাপতি। তার মেঝো ভাই জাহাঙ্গীর হাওলাদার শরীয়তপুর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার আপন ভাতিজা ওমর ফারুক পাংকু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। জাকির হাওলাদার বর্তমানেও বাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। কমিটির সদস্য সচিব সোহেল তালুকদারের পরিবারের সদস্যরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের মামলা কোর্টে চলমান রয়েছে এবং তার ভাই মাদক ও নারী সংক্রান্ত কারণে একাধিকবার জেল খেটেছে। আমরা এই কমিটি মানিনা। এর প্রতিবাদে তৃনমূল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে জাকির হাওলাদারের ক্যাডাররা হামলা চালায়। এতে ছাত্রদলের পাঁচ কর্মী আহত হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির আহবায়ক এইচএম জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ আজ শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। দীর্ঘ চার বছর পর শরীয়তপুর জেলায় ছাত্রদলের কমিটি দেওয়ায় বিভিন্ন উপজেলায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। বিকেলে আমরা জেলা শহরে একটি আনন্দ মিছিল বের করেছি। হঠাৎ একটি পক্ষ আমাদের আনন্দ মিছিলে হামলা চালায়। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, শরীয়তপুর জেলা বিএনপি দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস মিয়া নুরুদ্দীন অপুর অনুসারী। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান কিরণ ও সাধারণ সম্পাদক সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালু।
জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক এইচ.এম জাকির হোসেন সদস্য সচিব সোহেল তালুকদার সহ কমিটির অধিকাংশ সদস্য মিয়া নুরুদ্দীন অপুর অনুসারী।
অপরদিকে কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আফজাল খান, বাবু মাদবর, আতিকুর রহমান, পান্থ তালুকদার, ইসাহাক সরদার এবং রিয়াদ হোসেন ও তাজমুল মাঝি শফিকুর রহমান কিরণ ও সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালুর অনুসারী।
Leave a Reply