নিজস্ব প্রতিবেদক :
শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই তা বাতিলের দাবিতে প্রতিদিনই বিক্ষোভ মিছিল, ঝাড়ু মিছিল, সড়ক অবরোধ, মশাল মিছিল, কাফনের কাপড় পড়ে বিক্ষোভ সহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করে আসছে দলটির একটি পক্ষ।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার সন্ধ্যার পরে আবারও মশাল মিছিল করেছে জেলা ছাত্রদলের একাংশ।
শরীয়তপুর সরকারি কলেজ থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশী আফজাল খান, আতিকুর রহমান খান, পান্থ তালুকদার, বাবু মাদবর, ইসহাক সরদার ও ইমাম মোল্লা।
বক্তৃতারা বলেন, আপনারা জানেন গত ৩ জুন কেন্দ্র থেকে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যে কমিটিতে জাকির হোসেন হাওলাদারকে আহবায়ক করা হয়েছে। জাকির হোসেন হাওলাদার আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক। তার পরিবারের এবং বংশের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়া জাকির হাওলাদার এসএসসি ২০০০ ব্যাচের ছাত্র। সে দুই সন্তানের জনক এবং পেশায় আইনজীবী। রাতের আধারে টাকার বিনিময়ে তাকে আহবায়ক করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। আমরা শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এই কমিটি মানিনা। আমাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। কমিটি ঘোষণার পর থেকে আমরা সড়ক অবরোধ সহ রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছি। কিন্তু আমরা কোন ফল পাইনি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
এদিকে আজ বিকালে মোটরসাইকেল শোডাউন করে আনন্দ মিছিল করেছে সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির নেতাকর্মী সহ জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
শোডাউন শেষে জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক এইচ.এম জাকির হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল যাচাই-বাছাই করে শরীয়তপুর জেলা আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এই আহবায়ক কমিটির কাজ হচ্ছে একটি সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে পরবর্তী কমিটির কাছে দায়িত্বভার ছেড়ে দিয়ে বিদায় নেওয়া। কিন্তু ছাত্রদল নামধারী কিছু উচ্ছৃঙ্খল বখাটে সড়ক অবরোধ সহ শহরে বিশৃঙ্খলা তৈরীর অপচেষ্টা করছে। তারা আমাদের আনন্দ মিছিলে পর্যন্ত হামলা চালিয়েছে। তাদের এসকল কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায়না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর গত মঙ্গলবার (৩ জুন) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট শরীয়তপুর জেলা আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেন।
এতে এইচ.এম জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও সোহেল তালুকদারকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কমিটির বাকি সদস্যদের মধ্যে ১৬ জনকে যুগ্ম আহবায়ক ও ১৭ জনকে সদস্য করা হয়।
আগামী ১ মাসের মধ্যে আহবায়ক কমিটি পূর্নাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই তা বাতিলের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ শুরু করে করে জেলা ছাত্রদলের একটি অংশ। এ নিয়ে কমিটি ঘোষণার দিন গত মঙ্গলবার পাল্টা পাল্টি মিছিলের এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে পাঁচজন আহত হন।
এর পরের দিন বুধবার কমিটি বাতিলের দাবিতে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়ক অবরোধ করে দুই ঘন্টা বিক্ষোভ করে জেলা ছাত্রদলের একাংশ। এসময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সড়ক থেকে চলে যায় বিক্ষোভকারীরা।
পরেরদিন বুধবার আবার কমিটি বাতিলের দাবিতে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের চৌরঙ্গী মোড়ে সড়ক অবরোধ করে ঘন্টা ব্যাপী বিক্ষোভ করে ছাত্রদলের । এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ কারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে পুলিশ।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শহরের প্রধান সড়কে মশাল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
এদিকে সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিদিনই শহরে আনন্দ মিছিল করছে একটি পক্ষ।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে কয়েকদিন যাবৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শরীয়তপুর শহর।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালু বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি শরীয়তপুর জেলায় একটি আহবায়ক কমিটি দিয়েছে। এখানে জেলা বিএনপির কোন হাত নেই। কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতারা যেভাবে ভালো মনে করেছে তারা সেভাবে কমিটি দিয়েছে। কিন্তু একটি পক্ষ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকদিন যাবৎ জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে সড়ক অবরোধ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। আমি এটা সমর্থন করিনা। তাদের কমিটি পছন্দ না হলে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়ে সরাসরি বলতে পারে। কিন্তু তারা সেটা না করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করছে। তারা আমাদের কথা শুনছেনা।