নিজস্ব প্রতিবেদক :
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে একটি ভুয়া বায়না দলিল তৈরি এবং সেই ভুয়া বায়না দলিল ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগে দায়ের করা মামলার তিন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন, নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর গ্রামের সিদ্দিক আলম বেপারীর ছেলে মতিউর রহমান বেপারী (৬০), একই উপজেলার দক্ষিণ চাকধ গ্রামের বাবু হাওলাদারের স্ত্রী সাবিনা আক্তার (২৬) ও কলুকাঠি গ্রামের আলমগীর চৌকিদারের স্ত্রী শিল্পী বেগম (৪২)।
আজ (৪ জুলাই) শুক্রবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) অভিযান চালিয়ে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ চাকধ গ্রামের ফজলুল করিম হাওলাদারের ছেলে উজ্জ্বল হাওলাদারের সাথে একই এলাকার মজিদ হাওলাদারের ছেলে বাবু হাওলাদারের জমিজমা সংক্রান্ত পূরনো বিরোধ রয়েছে।
উজ্জ্বল হাওলাদার প্রতিবেশী রাজ্জাক হাওলাদর কাছ থেকে ২০১৭ সালে ১৮.৫৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে ভোগ দখল করে আসছেন। বাবু হাওলাদার উক্ত জমি কিনতে না পেরে সে উজ্জ্বল হাওলাদারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং উক্ত জমি দখল করার পাঁয়তারা করতে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বাবু হাওলাদার, বাবু হাওলাদারের স্ত্রী সাবিনা আক্তার, শ্বশুর মতিউর রহমান বেপারী, বোন শিল্পী বেগম সহ তাদের লোকজন মিলে উজ্জ্বল হাওলাদারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে একটি ভুয়া বায়না দলিল তৈরি করেন।
পরে বাবু হাওলাদারের স্ত্রী সাবিনা আক্তার ২০২৪ সালের ৭ মার্চ স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা বায়না দলিল শরীয়তপুর আদালতে দাখিল করে উজ্জ্বল হাওলাদারের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, উজ্জ্বল হাওলাদার উক্ত ১৮.৫৫ শতাংশ জমি বাবু হাওলাদারের কাছে বিক্রি করার জন্য ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে নগদ ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে একটি বায়না দলিল করেছেন।
কিন্তু উজ্জ্বল হাওলাদার মামলার নকল তুলে জানতে পারেন তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বাবু হাওলাদার ও তার লোকজন ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে একটি ভুয়া বায়না দলিল করেছে।
পরে উজ্জ্বল হাওলাদার বাদী হয়ে বাবু হাওলাদার, বাবু হাওলাদারের স্ত্রী সাবিনা আক্তার ও শ্বশুর মতিউর রহমান বেপারী ও বোন শিল্পী বেগম সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া বায়না দলিল তৈরি এবং সেই বায়না দলিল ব্যবহার করে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে শরীয়তপুর জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তে সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্টে স্বাক্ষর জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বায়না দলিলটি আদালতে ভুয়া প্রমাণিত হয়।
এ দিকে উজ্জ্বল হাওলাদারের দায়ের করা স্বাক্ষর জালিয়াতির মামলায় আজ শুক্রবার শিল্পী বেগম ও গতকাল বৃহস্পতিবার সাবিনা আক্তার ও মতিউর রহমান বেপারীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। আসামী সাবিনার ছোট শিশু সন্তান থাকায় তাকে জামিন দেয় আদালত।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া বায়না দলিল তৈরির অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামী মতিউর রহমান, সাবিনা আক্তার ও শিল্পী বেগমকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply